টেকনাফে অতিবৃষ্টির ফলে সুপারির বাম্পার ফলন কম হতাশ বিক্রেতা ও মালিকরা

টেকনাফে অতিবৃষ্টির ফলে  সুপারির বাম্পার ফলন কম হতাশ বিক্রেতা ও মালিকরা
ছবি: শামসুল আলম শারেক

দৈনিক বিজয় নিউজ টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে চলতি মৌসুমে পাকা সুপারি বাজারে আসছে। অতিবৃষ্টি ফলে অন্যান্য বছরের চেয়ে এই বছর সুপারি বাগানগুলোতে ফলন কম হয়েছে । বাজারে সুপারির দাম কম হওয়ার কারণে হতাশা ভোগ করেছে বিক্রেতারা স্থানীয় সুপারী ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফ থানার রোড পৌরসভার সুপারি বাজার, শামলাপুর বাজার, জাহাজপুরা বাজার, সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে চালান হয়। সুপারি বিক্রি করে গত বছরের ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও এই বছর হতাশ হয়েছে বিক্রেতারা। 

তাদের মতে, সুপারি বাগান মালিকরা তাদের উৎপাদিত সুপারি বাজারজাত করে এই বছরের  লাভবান হয়নাই। অর্থকরী এই ফসল হিসেবে সুপারী চাষ করে অনেক দীনহীন পরিবার  আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারত। কিন্তু এইবছর তার বিপরীত শুধু একটা মাত্র কারণ অধিক বৃষ্টি। 

টেকনাফ উপজেলার পান-সুপারি উৎপাদনের অন্যতম ইউনিয়ন বাহারছড়া শামলাপুর বাজার,টেকনাফ সদর ও সাব্রাং ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট বাজার গুলো  ঘুরে সুপারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি সাপ্তাহিক বৃহস্পতিবার ও রবিবার  টেকনাফ পৌরসভার সামনে বাজার বসে। এ বাজারে অর্থকরী ফসলের মধ্যে পান-সুপারির লেনদেন অন্যতম। এখান থেকে প্রায় ২০-৩০ টন (৯-১০ ট্রাক) সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে যায়। উপজেলার বাহারছড়া শিলখালীর সুপারী চাষি আনোয়ার বলেন, গত বছর এক কানি (৪০ শতক) জমিতে লাগানো ৪৫৮টি গাছে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে সুপারি ধরেছে ৪০০-৫০০টি। সুপারির ভালো বাজারমূল্য পেরেছি বাগান থেকে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করছি। চলিত বছরে অতিবৃষ্টির কারণে গাছে  সুপারির ফলন কম হয়েছে।   বাজারে আগের বছরের চেয়ে সুপারির দামও কম। 

সূত্রমতে, আদিকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় টেকনাফ সুপারির কদর রয়েছে। টেকনাফের সুপারির সঙ্গে মহেশখালীর পান নিয়ে লোকগানও রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত শহরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল সুপারির বাগান। পাশাপাশি কমবেশি সুপারি বাগান রয়েছে জেলার প্রতিটি উপজেলায়। কক্সবাজারের অনেক এলাকায় পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতি রয়েছে। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে একসঙ্গে নামে পাকা সুপারি। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে টেকনাফ- বিভিন্ন জায়গায় জমে উঠছে না সুপারির হাট বাজার। প্রথম দিকে দাম কম পেলেও মৌসুম শেষে  বাজারে সুপারির ভালো দাম পাবে বলে আসা করেন। টেকনাফে সাধারণত বিভিন্ন হাটে-বাজারে সুপারি কেনাবেচা হয়। উপজেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর বাজার, শামলাপুরে সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার বড় পাইকারি বাজার বসে। এই বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যান।

সুপারি ব্যবসায়ী রশিদ আলম মেম্বার বলেন, মৌসুমে জেলায় শতাধিক হাট-বাজার ও বিভিন্ন স্থানে সুপারি কেনাবেচা হয়। চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে সেগুলো বিক্রি করে থাকি। কাঁচা সুপারি রোদে শুকিয়ে সুপারির খোসা ফেলে দিয়ে প্রতি কেজি শুকনো সুপারি ৪-৫শ টাকা দরে বিক্রি করি। পাকা সুপারি বাজার থেকে কিনে পানিতে ৩-৪ মাস রেখে দিয়ে (ভিজিয়ে) সেগুলো বাজারে বিক্রি করি। পানিতে ভেজানো সুপারিকে স্থানীয় ভাষায় ভিজা সুপারি বলা হয়। এই ভিজা সুপারির চাহিদা বেশি তাই দামও ভালো পাওয়া যায়।

শামলাপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয়ভাবে ৮০টি সুপারিতে এক পন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি পন সুপারি ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের চাষিদের থেকে সুপারি কিনে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভ ভালো হয়। এই বছরের বৃষ্টির কারণে বাগানে সুপারি ফলন কম হয়েছে তাই আগের চেয়ে লাভবান কম হবে

টেকনাফ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, টেকনাফ উপজেলা পরিমাণ সুপারি উৎপাদিত হয় তা দেশের বাইরে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু এবারের অতিবৃষ্টি পাত হওয়ায় গত বছরের চেয়ে তুলনামূলক সুপারির ফলন কম হয়েছে। তিনি আরো জানান টেকনাফে ১২৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। চলিত মৌসুমে সুপারি পাকনা সুপারি বাজার আসছে।

দৈনিক বিজয় নিউজ/ শামসুল আলম শারেক