নাইক্ষ্যংছড়ি'র বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।

দৈনিক বিজয় নিউজ নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
পার্বত্য বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি'র বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায় , বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১৫ মাসের (জানুয়ারী ২১-মার্চ ২২ পর্যন্ত) প্রাতিষ্ঠানিক বকেয়া বেতন ০৪ টি উৎসব ভাতা এবং অভ্যন্তরীন পরীক্ষার হল ডিউটি ভাতা ও খাতা মূল্যায়ন ফি না পাওয়া এবং বিদ্যালয়ের বিগত ০৫ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ বিষয়ে তদন্তের উদ্দেশ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া তিন (০৩) সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত তদন্ত কমিটি বিগত ১১/০৮/২০২৪ইং এবং ২৭/১০/২০২৪ইং তারিখে সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক যাবতীয় প্রমাণপত্রাদি যাচাই বাছাই পূর্বক তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা যায়।
এলাকাবাসী এবং বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলেন, এই স্কুলে আমরা লেখাপড়া করেছি, এখন আমাদের ছেলে, মেয়েরাও লেখাপড়া করছে। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে স্কুলের বকেয়া টাকার জন্য দাঁড় করিয়ে রাখত এবং বকেয়া টাকা না দিলে পরীক্ষার হলে ঢুকতে দিবেনা বলত। ছেলেমেয়েরা বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করত এবং স্কুলে যেতে চাইতো না। এই প্রধান শিক্ষকের নির্যাতন আমরা অনেক সহ্য করেছি এই শিক্ষকের অপসারণ না হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের এই স্কুলে আর পড়াবো না। এই শিক্ষকের অপসারণ না হলে আমরা এলাকাবাসী এবং অভিভাবকরা মানববন্ধন করব। এই শিক্ষককে যারা সাপোর্ট করবে তাদেরকেও আমরা ছাড়বো না।
বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি নুরুল হাকিম (সাবেক চেয়ারম্যান) বলেন, ৫ ই সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুকের সাথে অফিসে সাক্ষাৎ কালে তিনি আমাকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১০ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছি, সেই টাকা দিয়ে আমি উক্ত ভবনের দ্বিতীয় তলার গিরিলের কাজ সম্পূর্ণ করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি আড়াই বছর এই স্কুলের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছি। নবম/ দশম শ্রেণীর প্রতি শিক্ষার্থীর মাসিক ফি ছিল ১৫০টাকা, আর এখন প্রতি শিক্ষার্থীর মাসিক ফি ২৫০ টাকা।আমি চ্যলেঞ্জ করে বলছি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের যতবার কমিটি হয়েছে সব পকেট কমিটি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং প্রধান শিক্ষকের শ্বশুরবাড়ি বাইশারীতে আওয়ামী লীগের পরিবার হওয়ায় সবাই সবকিছু জানলেও কেউ কোন বিষয়ে সাহস করে প্রতিবাদ করতেন না। আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আলম বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ায় তিনি কোন ধরনের কোন বিষয়ে তদারকি না করাতে প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছামত সবকিছু করতেন।
বাইশরী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সিনিয়র শিক্ষক হরিকান্ত দাস বলেন, আমি ৮ মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম, দায়িত্বের শেষে আমি আমার হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া পর উল্টো ২২ হাজার টাকা আমি বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে পাওনাদার হয়েছি। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে ১০লক্ষ টাকা দিয়ে শুধু ভবনের দ্বিতীয় তলার গিরিল এবং একটি বারান্দার কাজ করেছেন। বিএনপির সভাপতি আব্দুল করিম বান্টু বলেন, বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অনেক অভিযোগ শুনেছি কিন্তু আমরা সাহস করে কোন কিছু বলতে পারিনি। তদন্তের প্রতিবেদনে উপযুক্ত প্রমাণ অনুযায়ী তাকে বিচারের আওতায় আনা হোক। বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সবাই আমার সাথে ষড়যন্ত্র করছে এইসব বিষয়ে আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ এবং ডকুমেন্টস আছে। সময় মত আমি আমার প্রমান ও ডকুমেন্টস পেশ করব।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, সঠিক প্রমাণ এবং ডকুমেন্টস অনুযায়ী তাকে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।বাইশারী স্কুল এন্ড কলেজের গঠিত কমিটি জমা দেয়া তদন্ত রিপোর্ট বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে ১৯ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে সময় দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক বিজয় নিউজ/ এম হাবিবুর রহমান রনি