পাকিস্তানের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দাবি ইমরান খান ও নওয়াজ শরীফের

পাকিস্তানের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দাবি ইমরান খান ও নওয়াজ শরীফের
ছবি: সংগৃহিত

দৈনিক বিজয় নিউজ প্রতিনিধীঃ

কারাবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবারের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনে জয় দাবি করেছেন এবং তার কর্মী-সমর্থকদেরকে এই বিজয় উদযাপন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের মোট আসন সংখ্যা ২৬৬টি (একটি স্থগিত)। এর মাঝে ২৫০টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে।

কিন্তু আসন সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলছেন, তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগই (পিএমএল-এন) এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল।

এই কারণে তিনি অন্যদেরও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকার গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশ না হলেও প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কোনও দলই এই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয় লাভ করেনি।

এআই দিয়ে কারাবন্দী ইমরানের বার্তা

ইমরান খান এখন পাকিস্তানের কারাবন্দী। নির্বাচনের কিছুদিন আগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি পাচারের অভিযোগ আনে সরকার। যদিও মি. খান দাবি করেন যে তার বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীরা এগিয়ে থাকায় জেল থেকেই তিনি তার ভেরিফায়েড এক্স (বর্তমানে টুইটার) অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ সময় শনিবার মধ্যরাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা এক ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন।

এক্সে পোস্ট করা সেই ভিডিওতে তিনি দাবি করেন যে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর ওপর শত দমন-পীড়ন চলা সত্ত্বেও তারা এই নির্বাচনে ‘ভূমিধস বিজয়’ অর্জন করেছেন।

তার দল সমর্থিত প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য তিনি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি সেখানে নওয়াজ শরীফকে একজন ‘দুর্বল নেতা’ হিসেবে অভিহিত করেন। সেইসাথে, তিনি আরও বলেন যে পাকিস্তানি নাগরিকরা তাকে চায় না।

ইমরান খান।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

ইমরান খান।

পিটিআই সমর্থিতদের অপ্রত্যাশিত জয়

এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই একটা কানাঘুষা ছিলো যে দিনশেষে জিতবেন নওয়াজ শরীফই। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে বলছিলেন যে মি. শরীফের দিকে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সুনজর আছে।

কিন্তু সমস্ত জল্পনা-কল্পনাকে ছাপিয়ে পিটিআই সমর্থিতদের এমন সাফল্য তথা জয় অপ্রত্যাশিত।

পিটিআই প্রার্থীরা ‘ক্রিকেট ব্যাট’ প্রতীকের অধীনে নির্বাচন করতে পারবে না, নির্বাচন কমিশন এরকম একটা আইন জারি করায় এই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হয়েছিলো।

কারণ, দলীয় প্রতীক না থাকা মানে সেটি কোনও স্বীকৃত দল নয়। সেই নিরিখে, বর্তমানে নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন হচ্ছে সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দল।

নির্বাচনের পরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার, আটই ফেব্রুয়ারি এক বক্তব্য মি. শরীফ নিজেই স্বীকার করেন যে সরকার গঠন করার মতো আসন সংখ্যা তার দলের নেই। তখন তিনি অন্য দলের প্রার্থীদেরকে তার সাথে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি দেশকে কঠিন সময় থেকে বের করে আনতে পারবেন।

নির্বাচনের আগে দলগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

নির্বাচনের আগে দলগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে।

ইমরানের দল কী এই আহ্বানে সাড়া দিবে?

শুক্রবার বিবিসি’র নিউজনাইট প্রোগ্রামে ইমরান খানের সাবেক বিশেষ সহকারী জুলফিকার বুখারী বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে ইমরান খানকে এবং আমার দল পিটিআই-এর নৈতিকতা সম্পর্কে যতটুকু জানি, তা থেকে আমার মনে হয় না যে আমরা প্রধান কোনও রাজনৈতিক দলের সাথে একজোট হয়ে সরকার গঠন করবো।”

“তবে আমরা জোট গঠন করবো...সংসদে থাকার জন্য-স্বতন্ত্র হিসেবে নয়; এক ব্যানার ও এক দলের হয়ে।“

তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যে ইমরান খানকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কি-না।

উত্তরে মি. বুখারী বলেন, “আমরা ভীষণ আশাবাদী যে যেই মুহূর্তে আমরা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে যাবো, তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। এবং, তার বিরুদ্ধে আনা অনেক অভিযোগ বাতিল হয়ে যাবে।”

নওয়াজ শরীফ (বাম থেকে) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো নির্বাচনে অংশ নিলেও ইমরান খান এখনও কারাগারে রয়েছেন।

ছবির উৎস,EPA

ছবির ক্যাপশান,

নওয়াজ শরীফ (বাম থেকে) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো নির্বাচনে অংশ নিলেও ইমরান খান এখনও কারাগারে রয়েছেন।

কোন দল কত পেয়েছে?

পাকিস্তানে সরকার গঠন করার জন্য কোনও দলকে ন্যূনতম ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করতে হবে।

কিন্তু দেশটির নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যে ২৫০টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে কোনও দলই এককভাবে এত বিপুল সংখ্যক আসন পায় নি।

এমনকি বাকি ১৫টি আসনের ফলাফলও যদি কোনও একক দলের পক্ষে যায়, তারপরও তা সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন হবে না।

এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আসনের দিক থেকে এগিয়ে। এদের মাঝে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীই বেশি।

পাকিস্তানের সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জানাতে হবে যে, তারা কোন দলে যোগ দেবেন নাকি স্বতন্ত্র হিসাবেই থাকবেন।

পাকিস্তানের পত্রিকা ডন বলছে, নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা ৯১টি আসনে জয়লাভ করেছেন। পিএমএলএন ৭১ আসন জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

২০০৭ সালে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হওয়া পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান পিপল’স পার্টি এই নির্বাচনের তৃতীয় প্রধান দল। এই দল জয় পেয়েছে ৫৩টি আসনে।

এছাড়া, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য দলের প্রার্থীরা পেয়েছে ৩৩টি আসন।

এমনিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। তার মধ্যে ২৬৬ আসন হলো সাধারণ আসন, যেগুলোতে সরাসরি ভোট হয়। বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। সেগুলোর ৬০টি নারীদের ও ১০টি অমুসলিমদের।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ আসনগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন হলো পাঞ্জাবে, ১৪১টি।

সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখোয়া, বালুচিস্তান ও ফেডেরাল ক্যাপিটালে আছে যথাক্রমে ৬১টি, ৪৫টি, ১৬টি ও তিনটি।

এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই একটা কানাঘুষা ছিলো যে দিনশেষে জিতবেন নওয়াজ শরীফই।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই একটা কানাঘুষা ছিলো যে দিনশেষে জিতবেন নওয়াজ শরীফই।

নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ

নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ভোটের সময় নির্বাচনী স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, অবাধ তথ্য প্রাপ্তির সুযোগের মতো মৌলিক মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার জন্য যুক্তরাজ্য পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।

এক বিবৃতিতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে এই নির্বাচনে সব দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেয়া হয় নি।

এদিকে, মার্কিন পরারাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার পানিস্তানের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি এটিকে ‘মত প্রকাশ, সংগঠন ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর অযৌক্তিক বিধিনিষেধ’ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলার কথা এবং ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধের বিষয়েও বলেছেন। তিনি মনে করেন, নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার পেছনে এগুলো কারণ।

যদিও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে এসব সেবা বন্ধ করা হয়েছিলো। সুত্রঃ বিবিসি বাংলা

দৈনিক বিজয় নিউজ/ই